বৃহস্পতিবার, অক্টোবর 23, 2025
27 C
Dhaka

দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে

উন্নত দেশগুলো জ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর বিপরীতে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে সামান্য সংস্কার করে জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করা সম্ভব নয়। এ কারণে এটিকে সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘জুলাই বিপ্লব ও বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ শীর্ষক’ জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বক্তারা বলেন, ‘শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত- একজন মানুষকে নৈতিকভাবে সৎ, মূল্যবোধে উজ্জীবিত করা এবং সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু আমাদের বর্তমান ব্যবস্থা সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাধ্যতামূলক আরবি ও ইসলামী শিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল- মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করা। পরে জিয়াউর রহমান এই বিষয়গুলো পুনরায় চালু করলেও তা যথেষ্ট কার্যকর হয়নি।’

সংলাপে মূল বক্তব্যে লে. ক. (অব.) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা, এখনো মূলত পাঠ্যপুস্তক নির্ভর ও সনদকেন্দ্রিক। অথচ বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হলো ধর্মীয় ও জাগতিক জ্ঞান, দক্ষতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও উদ্ভাবন-মনস্কতার সমন্বয়। তাই পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হওয়া উচিত ধর্মীয় শিক্ষার দর্শন ও লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ- যেখানে কেবল সনদ নয়, ধর্মীয় দর্শনে কর্মমুখী সম্মানজনক জীবনযাপন ও উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এদিকে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে এই দেশ সংকটে পতিত হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, এটি হলে আগামী নির্বাচন ঝুলেও যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের গণআন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল নতুন করে রাষ্ট্রকে গঠন করা। তবে সেদিন ক্যান্টনমেন্টে বসে একটি সরকার গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও ছিল। তখন বিপ্লবী সরকার গঠন করতে পরেনি- এটা একটা ভুল ছিল। তখনই সরকার ব্যবস্থার সংকট তৈরি হয়ে গেছে। সেদিন ক্যান্টনমেন্টে বসে চক্রান্ত হওয়ার কারণে এখন আমরা সমস্যায় পড়ে গেছি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার সংগঠক জায়েদুল করিম চৌধুরী পলাশ বলেন, ‘এই সরকারের পরিচয়গত সংকট রয়েছে। তারা বলতে পারছে না এটি কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থা। যদিও বিপ্লবী সরকার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। এই সরকার ঘোষণাপত্রের কিছুই করতে পারেনি। অন্যদিকে জুলাই সনদের জন্য ঐকমত্য হয়নি। জুলাই সনদ হলেও তার আইনিভিত্তি না থাকলে কোনো কাজে আসবে না।’

শিক্ষাবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এটি এখন একটি বহুমুখী ও অগোছালো ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যার কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা বা জাতীয় লক্ষ্য নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর; এখানে সৃজনশীল চিন্তা, বিশ্লেষণ বা নিজের মতপ্রকাশের সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও বাস্তব জ্ঞান ও মৌলিক দক্ষতায় পিছিয়ে থাকে।’

সম্মিলিত নারী প্র‍য়াসের সাধারণ সম্পাদক ড. ফেরদৌস আরা খানম বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদর্শ প্রভাবের প্রসার ঘটানো জরুরি। একইসঙ্গে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে সবচেয়ে বেশি দরকার ধর্মীয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কযুক্ত কারিকুলামকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং একে প্রাধান্য দেওয়া। কারণ সততা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম ও মানবিকতা— এই মূল্যবোধগুলো থেকেই একজন ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়।’

দুই দিনব্যাপী এই জাতীয় সংলাপের প্রথম দিনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংলাপের আহ্বায়ক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. ওয়ারেসুল করিম, কর্নেল (অব.) মো. জাকারিয়া হোসেন, আভেররোস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল মাহসিনা মমতাজ মারিয়া প্রমুখ।

Hot this week

রাকসু নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও...

নন-ক্যাডার পদে নিয়োগবিধি নিয়ে নতুন বার্তা সারজিসের

নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বিশেষ সংশোধন বিধিমালাসংশোধন নিয়ে নতুন বার্তা...

১১৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙলেন রাবাদা

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ঘটল এক বিরল দৃশ্য—স্পিডস্টার কাগিসো রাবাদা শুধু...

শুধু আয়ে নয় সুযোগেও বৈষম্য রয়ে গেছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। তিনি ২০২৪ সালের...

আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন : জামায়াতকে প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,...

Topics

রাকসু নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও...

নন-ক্যাডার পদে নিয়োগবিধি নিয়ে নতুন বার্তা সারজিসের

নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বিশেষ সংশোধন বিধিমালাসংশোধন নিয়ে নতুন বার্তা...

১১৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙলেন রাবাদা

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ঘটল এক বিরল দৃশ্য—স্পিডস্টার কাগিসো রাবাদা শুধু...

শুধু আয়ে নয় সুযোগেও বৈষম্য রয়ে গেছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। তিনি ২০২৪ সালের...

আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন : জামায়াতকে প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন,...

ফোনের চার্জিং পোর্টে এই ৫টি জিনিস কখনোই লাগাবেন না

স্মার্টফোনের ইউএসবি পোর্ট শুধু চার্জ দেওয়ার জন্য নয়, বরং...

অন্তরে আল্লাহ-রাসুল সম্পর্কে বাজে চিন্তা এলে যে ৫ কাজ করবেন

মানুষের মনে বিভিন্ন মন্দ ভাবনা আসে। কখনো এমনসব অবাঞ্ছিত...

১৩ খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে সুখবর দিল মালয়েশিয়া

নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি খাতে শ্রমঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে বিদেশি কর্মী...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img