জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। যুক্তিতর্কের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে। তা না হলে জাতির প্রতি অবিচার করা হবে। ১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে তাকে ১৪০০ বার ফাঁসি দেওয়া উচিত। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পঞ্চম ও সমাপনী দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা অনুশোচনাহীন ও হৃদয়হীন অপরাধী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন সব ‘অপরাধের প্রাণভোমরা’। শত শত নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও তিনি অনুশোচনা না করে এখনো ভারতে বসে প্রতিপক্ষকে খুন-হামলা করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। পালিয়ে যাওয়ার আগে হাসানুল হক ইনু, ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মাকসুদ কামাল এবং শেখ হাসিনার সহকারী সামরিক সচিব কর্নেল রাজীবসহ সবার অডিও কথোপকথনে তার অপরাধ পরিষ্কার। তাই শেখ হাসিনার ফাঁসি না হলে অবিচার হবে। তার সর্বোচ্চ শাস্তি (চরম দণ্ড) হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে নিজের দেশের নাগরিককে হত্যা করতে না পারে।
গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিগত সময়ে কোটি কোটি টাকা পাচার ও লুটপাট করেছেন। এসব সম্পদ থেকে জুলাই-আগস্টে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত যারা বিচার চেয়ে মামলা করেছেন, তাদেরও নির্মূলের কথা বলেছেন হাসিনা। কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে। এতে বোঝা যাচ্ছে, এত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও তার মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। তিনি একজন হার্ড ক্রিমিনালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং এই ট্রাইবুনালের মামলায় তিনি সব অপরাধীর নিউক্লিয়াস ছিলেন।
মামলার অন্যতম আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গ্যাং অব ফোরের সদস্য ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার বাসায় বসে নিয়মিত এসব হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হতো। ড্রোন ওড়ানোসহ হেলিকপ্টার থেকে মারণাস্ত্র ছোড়ার সিদ্ধান্ত হতো। তিনি নিজে গ্রাউন্ডে গিয়ে দেখেছেন সঠিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে কি না। তাকে ভিডিও দেখানো হয়েছে। তিনি কমান্ড স্ট্রাকচারে দ্বিতীয় পজিশনে ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আসাদুজ্জামানকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আর রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যেহেতু আইন অনুযায়ী আদালতকে তথ্য দিয়ে বা সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করেছেন, তার ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই ছিলেন তার পরিবারের আলোর প্রদীপ। ভবিষ্যতে নিজ পরিবারের দায়িত্ব নিতেন তারা। সুতরাং আসামিদের সম্পদ থেকে এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ।
তাজুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হন ৩৫ হাজার মানুষ। তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সব অপরাধ বাস্তবায়নে পরিকল্পনাকারী ছিলেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ আইজিপির কাছে পৌঁছাতেন।
সাবেক আইজিপি ও এই মামলার রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন সত্য বলেছেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তিনি সত্য প্রকাশ করে অ্যাপ্রুভার হয়েছেন। তাই তার বিষয়ে আমাদের কোনো সাবমিশন নেই। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নেবে।
‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের উদ্ধৃতি
ট্রাইব্যুনালের যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনার নানা ভয়াবহ অপকর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার এক সময়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের কিছু ঘটনার উদ্ধৃতি দেন, যেখানে রেন্টু লেখেনÑশেখ হাসিনা লাশ দেখলেই খুশি হতেন। তিনি ছিলেন বিকৃত মানসিকতার। একবার লালবাগে সাতটি লাশ পড়লে তিনি খুশি হয়ে বলেন, আজ আমি বেশি খাবার খাব।
এছাড়া যেদিন জাহানারা ইমাম মারা যান সেদিন তিনি বলেন, আপদ গেছে। এই আপদকে ‘র’ আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেয়েছিল। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মূলত এই বইয়ের বর্ণনার মাধ্যমে শেখ হাসিনার চরম জিঘাংসা ও বিবৃত রুচির মানসিকতা ফুটে উঠেছে।
জুলাইয়ের অপরাধ ছিল ‘সিস্টেমেটিক ও ওয়াইডস্প্রেড’
চব্বিশের জুলাই আন্দোলনটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, সিস্টেমেটিক ও ওয়াইডস্প্রেড। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র এবং একই সঙ্গে দলীয় অঙ্গসংগঠন ও হেলমেট বাহিনী ব্যবহার করা হয় ওই গণহত্যায়। আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মূল উপাদান ওয়াইডস্প্রেড ও সিস্টেমেটিকÑদুটিই এখানে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের যুক্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনীর প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সরাসরি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, প্রাণঘাতী অস্ত্র ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের নির্দেশনা তিনি পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে টেলিফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী তাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তখন এ নির্দেশ তার অধস্তন কর্মকর্তাদের জানান। অধস্তন কর্মকর্তারা অর্থাৎ ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান, প্রলয় জোয়ার্দারÑতারা কমান্ড সেক্টরের মাধ্যমে ও ওয়্যারলেস মেসেজে বিভিন্ন কমান্ড পোস্ট, বিভিন্ন জায়গায় যেসব বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছে দেন । আদালতে ওয়্যারলেস অপারেটর ওই বার্তার অডিও শুনিয়েছেন। তাই সব মিলিয়ে পুরো হত্যাযজ্ঞ যে হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে, তা প্রমাণ হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হেলিকপ্টারের ফ্লাইট ছিল ৩৬টি। এছাড়া সেখানে কী কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তার তালিকা তোলা হয়েছে। কত রাউন্ড গুলি করা হয়েছে, তার তালিকাও উপস্থাপন করা হয়েছে। আন্দোলনে মোট কত রাউন্ড গুলি ব্যবহার করা হয়েছে, তার বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে এসএমজি, লাইট মেশিনগান, শটগান, রাইফেল, সাউন্ড গ্রেনেড, স্টান গ্রেনেডÑসবকিছুর হিসাব আছে। ভিডিও ফুটেজ, আহতদের গুলিবিদ্ধ হওয়া, শহীদ এবং আহতদের শরীর থেকে যে বুলেটগুলো বের করা হয়েছে, তাও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সবকিছুর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যায় হাসিনার সুপিরিয়র কমান্ড প্রমাণ হয়েছে।
৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
ঐতিহাসিক এই মামলায় ইতোমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর, যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি সরাসরি সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পারেননি। সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ । তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মোট ৮৪ জন জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মাঝে মোট ৫৪ জন সরাসরি ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যার মধ্যে আছেন সাত আন্দোলনকারী, তিন চিকিৎসক এবং এক সাংবাদিক। প্রসিকিউশনের তথ্যে বলা হয়, ৬০ জেলার ৪৩৮টি স্পটে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে পাঁচ অভিযোগ
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে প্রথমটি হলোÑ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ীদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ।
দ্বিতীয়ত, আসামি ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেÑযা তাদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে ।
অপর অভিযোগে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা, সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্পদূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের কথা বলা হয়েছে।
আরেক অভিযোগে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা, সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চাঁনখারপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা ও ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের তথ্য উল্লেখ আছে।
সবশেষ শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ-নিরস্ত্র ছয় ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন।
মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়। যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে।
গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।